ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম

সঠিক প্রমাণপত্র আপলোড করে অনলাইনে আবেদন করার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করা যায়। দেখুন কিভাবে NID সংশোধন আবেদন করবেন।

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
Advertisement

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরাতন বা বয়স্ক নাগরিকদের ভোটার আইডি কার্ড করার সময় তাদের Academic Certificate, Passport বা জরুরী অন্যান ডকুমেন্ট অনুসারে জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স দেননি। এতে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের সাথে তাদের অন্যান্য ডকুমেন্টে জন্ম তারিখ অমিল রয়ে যায়।

আপনার হয়তো এই ধরনের কোন সমস্যা রয়েছে, তাই আপনি জানতে চাইছেন যে ভোটার আইডি কার্ডের বয়স কমানো যায় কিভাবে, বা বাড়ানো যায় কিভাবে।

তাই, আপনাদের সুবিধার্থে আজ আলোচনা করলাম, জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে।

আসুন প্রথমেই জেনে নিই, জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে।

Advertisement

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে

জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে প্রয়োজন হয়:

  • SSC অথবা HSC অথবা সমমানের শিক্ষা সনদ;
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ;
  • পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স (শিক্ষা সনদ না থাকলে);
  • বিবাহের কাবিন নামা (শিক্ষা সনদ না থাকলে);
  • এমপিও সিট/সার্ভিস বহি (সরকারি চাকরিজীবি হলে)
  • কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন/সুপারিশ (সরকারি চাকরিজীবি হলে)

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার নিয়ম

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য services.nidw.gov.bd ভিজিট করুন। রেজিস্টার করুন অপশন থেকে ফেইস ভেরিফিকেশন করে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন। লগইন কররে প্রোফাইল থেকে জন্ম তারিখ সংশোধন করুন। সংশোধন ফি ও প্রমাণপত্র আপলোড করে আবেদন জমা দিন। আবেদন অনুমোদিত হলে তথ্য সংশোধন হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রক্রিয়াটি নিচে বিস্তারিত দেখানো হলো। প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে অনুসরণ করে আপনার এনআইডি সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন।

Advertisement

ধাপ ১: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের স্ক্যান কপি/ ছবি তুলে নিন

ভোটার আইডি সংশোধন আবেদন করার আগে আপনার ‍উচিত প্রয়োজনীয় প্রমাণগুলো স্ক্যান করে নির্দিষ্ট সাইজের মধ্যে Crop করে নেয়া। স্ক্যান করতে না পারলে, কোন টেবিলের উপর রেখে উপর থেকে ছবি তুলে নিন।

ধাপ ২: NID ওয়েবসাইটে একাউন্ট রেজিষ্ট্রেশন করুন

জাতীয় পরিচয়পত্রের সাইটে যে কোন সেবা নেওয়ার জন্য আপনাকে NID Account Registration করতে হবে। যদি পূর্বের রেজিস্ট্রেশন করা থাকে সরাসরি NID নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে আগে রেজিস্টার অপশন থেকে রেজিস্ট্রেশন করুন।

দেখুন কিভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন

ধাপ ৩: জন্ম তারিখ সংশোধন করুন

NID একাউন্টে লগইন করার পর প্রোফাইল অপশনে যান। এখানে ৩ ধরণের তথ্য দেখতে পাবেন, ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য ও ঠিকানা।

Advertisement
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন

ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করার জন্য, উপরের ডান পাশ থেকে এডিট বাটনে ক্লিক করুন। নিচের মত তথ্যগুলো সংশোধন করার অপশন পাবেন।

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন

সঠিক জন্মতারিখ লিখার পর, পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আপনার বর্তমানে ভুল জন্ম তারিখ ও সংশোধিত জন্ম তারিখ দেখতে পাবেন। সঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে যান।

ধাপ ৪: NID সংশোধন ফি পরিশোধ করুন

পরবর্তী ধাপে আসলে নিচের মত একটি পেইজ আসবে। এখানে লেখা থাকবে You have total deposit of 0 BDT। এখন বিকাশ বা অন্য কোন মোবাইল ব্যাংকিং হতে যত টাকা জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি জমা দেয়ার পর তা এখানে যুক্ত হবে। তারপর ই আপনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে আবেদন জমা দিতে পারবেন।

মনে রাখবেন ফি জমা দেয়ার পর, একবার পেছনে যান। আবার পরবর্তী অপশনে গেলে আপনার জমাকৃত ফির পরিমাণ দেখতে পাবেন।

বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা

বিকাশের মাধ্যমে ফি দিতে বিকাশ এ্যাপ থেকে আপনার বিকাশ একাউন্টে লগইন করুন। এবং নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।

  1. পে বিল অপশনে যান;
  2. সরকারি ফি অপশনে ক্লিক করুন এবং NID Service অপশনটি বাছাই করুন;
  3. আপনার NID নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন;
  4. NID Info Correction অপশন সিলেক্ট করুন;
  5. আপনার বিকাশ একাউন্টের পিন নম্বর দিয়ে ফি পরিশোধ করুন।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফি জমা দেওয়ার নিয়ম
জাতীয় পরিচয় পত্র ফি পরিশোধ

ধাপ ৫: ডকুমেন্ট আপলোড ও আবেদন সাবমিট করুন

সঠিক জন্ম তারিখের স্বপক্ষে যে প্রমাণপত্রগুলো প্রথম ধাপে স্ক্যান করে নিয়েছেন এখন সেগুলো একে একে আপলোড করতে হবে।

জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য সাধারণত SSC Certificate, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য ডকুমেন্টও প্রয়োজন হতে পারে।

ধাপ ৬: ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন ফরম ডাউনলোড

আবেদন সাবমিট করার পর আবার প্রোফাইলে ফিরে আসুন। উপরের দিকে আবেদনটি ডাউনলোড করার একটি লিংক দেখতে পাবেন। লিংকে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ফরম ডাউনলোড করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।

ভোটার আইডি কার্ড বয়স সংশোধন করতে কত দিন লাগে

ভোটার আইডি কার্ডে বয়স সংশোধন করতে কতদিন লাগে তা মূলত নির্ভর করবে কত বছর বয়স সংশোধন করা হচ্ছে এবং কি কি ডকুমেন্ট দেয়া হচ্ছে তার উপর। যেমন, ৩ বছর বয়স সংশোধন করতে ৭ দিন, ৫ বছর হলে ১৫ দিন, এবং ৫ বছরের বেশি বয়স সংশোধনের জন্য ৩০ থেকে ৪৫ দিন লাগে।

বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন- জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কতদিন সময় লাগে

বুঝতে পারেন নি? একটু ব্যাখ্যা করে বলি। কত বছর বয়স সংশোধন করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে সংশোধনের ৪টি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। নিচের ছকে সংশোধনের ক্যাটাগরি অনুসারে কতদিন লাগে দেখানো হলো:

ক্যাটাগরিবয়স সংশোধনদায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসময়
৩ বছর পর্যন্ত সংশোধনউপজেলা নির্বাচন অফিসার৭ দিন
৫ বছর পর্যন্ত সংশোধনজেলা নির্বাচন অফিসার১৫ দিন
৫ বছরের বেশি
(চাকরীর বয়স, মুক্তিযোদ্ধা, ভোটার যোগ্যতা, নির্বাচনে প্রার্থীর সীমা, বয়স্কভাতা অর্জনের বয়স সীমা বাদে)
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার৩০ দিন
৫ বছরের বেশি
(সকল ক্ষেত্রে)
NID মহাপরিচালক৪৫ দিন

FAQs

ভোটার আইডি কার্ডে বয়স বা জন্ম তারিখ সংশোধন করতে এসএসসি সনদ ও অনলাইন জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়। এগুলোর কোন একটি না থাকলে, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য যেকোন গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্ট লাগবে।

জাতীয় পরিচয় পত্রে বয়স সংশোধন করতে ৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে।

না, আবেদনের কপি আপনার নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে আপনার কাগজপত্র যাচাই করতে বা আবেদনের শুনানীর জন্য ডাকা হলে সকল কাগজপত্র দেখাতে হবে।

জরুরী কথা

উপরের দেখানো পদ্ধতিতে, আপনি নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেই অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। এজন্য কোন সাইবার ক্যাফে বা কম্পিউটার সেবার প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না।

আবেদন করার পর, আবেদনের কপিও কোথাও জমা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে অবশ্যই আবেদন পত্রের কপি ও আপলোড করা সকল প্রমাণপত্রের ১ কপি ফটোকপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করবেন। নির্বাচন অফিস থেকে ডাকা হলে এগুলো দেখাতে হবে।

তবে নামের বানান, জন্মতারিখ এসব সংশোধনের জন্য সাধারণত ডাকা হয়না। উপযুক্ত প্রমাণ আপলোড করলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই মোবাইলে সংশোধন আবেদন অনুমোদনের মেসেজে পেয়ে যাবেন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন সংক্রান্ত আরও তথ্য

Advertisement

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।