কোটি নাগরিকের এনআইডির মেয়াদ শেষ: পুনরায় NID পেতে লাগবে ফি
শিগ্রই শেষ হতে চলেছে প্রায় ১ কোটির বেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ। পুনরায় এনআইডি কার্ড পেতে গুনতে হবে ফি। জানুন বিস্তারিত।
NID Card বা জাতীয় পরিচয়পত্র নাগরিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমানে সকল ক্ষেত্রে এনআইডি ব্যবহার রয়েছে বিশেষ করে ব্যাংক, পাসপোর্ট, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এনআইডি কার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
তবে খুব শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে কোটি কোটি নাগরিকদের এনআইডির মেয়াদ এবং ফি পরিশোধ করেই নাগরিকদের ২য় বার জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে।
জানুন এনআইডির মেয়াদ এবং পুনরায় এনআইডি কার্ড নেওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ
বাংলাদেশের নাগরিকদের নাগরিকত্বের অন্যতম প্রমাণ বা দলিল হলো এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র যা বিনা মূল্যে নির্বাচন কমিশন থেকে নাগরিকদের বিতরণ করা হয়।
নাগরিকত্বের প্রমাণ এই এনআইডি কার্ডের মেয়াদ বা সময়সীমা হলো ১৫ বছর এবং এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নাগরিকদের পুনরায় নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে এনআইডি কার্ড নিতে হবে।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ নাগরিকদের বিনা মূল্যে এনআইডি কার্ড বিতরণ করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০। অর্থাৎ ২০০৮ সালের পর ৩ কোটি ৮০ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন নাগরিক ভোটার হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসকল নাগরিক NID Smart Card নিয়েছেন তাদের এনআইডির মেয়াদ আরও পরে শেষ হবে।
বর্তমানে ২০০৮ সালের ভোটারদের অগ্রাধিকার দিয়ে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড সরবারহ করা হচ্ছে। তাদের মতে, এ পর্যন্ত স্মার্টকার্ড ছাপানো হয়েছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ এবং বিতরণ করা হয়েছে কেবল ৭ কোটি ১ লাখ। অর্থাৎ, এই হিসাবে ১ কোটি ৯ লাখ নাগরিকদের পুনরায় এনআইডি কার্ড নিতে হবে।
এ বিষয়ে এনআইডির অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, একজন নাগরিকের এনআইডির মেয়াদ ১৫ বছর হলেই শেষ হবে এবং তাকে পুনরায় এনআইডি নিতে হবে। প্রথমবার বিনামূল্যে এটি বিতরণ করা হয়েছিল কিন্তু দ্বিতীয়বার নেওয়ার জন্য অবশ্যই নাগরিকদের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেছেন, চলতি বছরেই অনেক নাগরিকের এনআইডির মেয়াদ শেষ হবে এবং ১২শ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে আগামী বছরের শুরুর দিকে এনআইডির এই কার্যক্রমটি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থাৎ, ২০০৮ সালের পূর্বে যারা এনআইডি কার্ড নিয়েছিল তাদের এনআইডি মেয়াদ এবছরে শেষ হতে চলেছে এবং দ্বিতীয়বার অবশ্যই নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে বা নিতে হবে।
পুনরায় এনআইডি কার্ড পাওয়ার উপায়
এনআইডি কার্ডের মেয়াদ শেষে পুনরায় NID কার্ড পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাদের উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে পুনরায় এনআইডি কার্ড আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে এনআইডি কার্ড নিতে হবে।
আইডি কার্ডের মেয়াদ ১৫ বছর হওয়ায় ২০০৮ সালের আগে যেসকল নাগরিক এনআইডি কার্ড নিয়েছে চলতি বছরেই তাদের এনআইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এর ফলে তাদের পুনরায় এনআইডি কার্ড নিতে হবে।
তবে ২০০৮ সালের পরে যারা এনআইডি কার্ড নিয়েছেন, তাদের আপাতত মাথা ব্যাথার কারণ নেই। কারণ তাদের কার্ডগুলো স্মার্টকার্ড হওয়ায় তাদের এখনো মেয়াদ শেষ হয়নি।
এনআইডি কার্ডের গুরুত্ব
বর্তমানে দেশে প্রায় সব ধরনের সেবা নিতে গেলে এনআইডি কার্ড থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের প্রায় ১৬৪ টি প্রতিষ্ঠান ইসির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যার মধ্যে ৪৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৬৩ টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ৬টি মোবাইল কোম্পানি, ৮ টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি, ২৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি বীমা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ৪টি প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত।
এই তথ্য থেকে বুঝা যায় যে, সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে ব্যাংক এবং মোবাইল অপারেটর গুলোতে। এনআইডি কার্ডের ব্যবহার এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এটি এখন আমাদের নিত্য ব্যবহার্য একটি জিনিস।
এক্ষেত্রে যাদের এনআইডি মেয়াদ শেষ তারা বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে তবে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ইসি কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত দেয়নি।
এ বিষয়ে এনআইডি মহাপরিচালক বলেছেন, “পুনরায় এনআইডি কার্ড বিতরণের কার্যক্রমটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং এ বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। এনআইডি কার্যক্রম যখন শুরু হবে তখন সকল বিষয় বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
শেষ কথা
২০০৮ সালের পূর্বে নেওয়া ১ কোটি ৯ লাখ নাগরিকদের এনআইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের পুনরায় মূল্য পরিশোধ করে এনআইডি কার্ড নিতে হবে।
আজকাল প্রায় সকল বিষয়ে এনআইডি কার্ড বাধ্যতামূলক হওয়ায় এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশ্যই এনআইডি কার্ড নিয়ে নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: www.banglanews24.com