সরকারি চাকরিজীবীদের (NID) এনআইডি সংশোধন কঠিন হলো, লাগবে কর্তৃপক্ষের মতামত
এখন থেকে সরকারী চাকরিজীবিদের জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে লাগবে কর্তৃপক্ষের মতামত। জানুন বিস্তারিত তথ্য।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র বিবেচনা ছাড়াও চিঠির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট মতামত চাওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের সন্তোষজনক মতামত পেলেই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা হবে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমকর্তারা জানান, কিছু মানুষ তার জন্ম নিবন্ধন ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের তথ্য গোপন করে ভিন্ন তথ্য দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। পরবর্তীতে অনলাইনে বেতন নির্ধারণের সময় এসব তথ্য মিল না থাকার কারণে তার বেতন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ফলে তারা আবার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের চেষ্টা করেন।
চাকরি পাওয়ার পর অনেকের বেতন আটকে যায় জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে বয়সের মিল না থাকার কারণে। এছাড়া অন্যান্য তথ্যের গরমিলও দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। এমন সংকটে পড়ে তারা আসেন National ID Card সংশোধন করার জন্য। এরকম কিছু ঘটনায় বের হয় তথ্য গোপন করে চাকরী নেয়ার বিভিন্ন ঘটনা।
এ ধরণের কর্মকান্ডে একদিকে যোগ্য প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হন, আবার আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হন সংশ্লিষ্টরা। তাই এখন থেকে নির্বাচন কমিশন সিন্ধান্ত নিয়েছে যে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের এনআইডি সংশোধন করা হবে না।
এধরণের ঘটনার জন্য প্রকৃতপক্ষে অনেক কিছু দায়ী, যেমন:
- সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়া;
- নিয়োগ বাণিজ্য করে যাকে তাকে চাকরীতে নিয়োগ করা;
- অনেকের এনআইডিতে ভুল থাকলেও তা চাকরীর আবেদনের আগে সংশোধন না করা, ইত্যাদি।
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করে। এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সময় এনআইডি আমলে না নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বৈঠকে আরো জানানো হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থা থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে এসব ভুয়া তথ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য এনআইডি শাখায় আবেদন করেছেন।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, চাকরীর আগে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও তা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমলে না নিয়ে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী কর্তপক্ষের অবহেলাকেই মূলত দায়ী।
অনেক চাকরিপ্রার্থীর সরকারি চাকরির বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ার পরও ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টে বয়স কম দেখিয়ে চাকরিতে আবেদনের সুযোগ নেয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভিন্ন জন্ম তারিখ হওয়ার কারণে স্বয়ংক্রীয় বেতন সিস্টেমে তার বেতন নির্ধারণ না হওয়ায় এ ধরণের ঝামেলায় পড়েন।
এমতাবস্থায় চাকরি পাওয়ার পর অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে NID কার্ডে লিপিবদ্ধ তথ্যাদির সাথে নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বইয়ের তথ্যের মিল না থাকার কারণে বেতন নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যাদি যাচাই না করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেয়ার কারণে ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত বিকৃতি করাসহ নানা রকম অসদুপায় ও ছল-চাতুরি লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার নিবন্ধন করার সময় একটি জন্ম সনদ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ভিন্ন আরেকটি জন্ম সনদ ব্যবহার করে চাকরিতে যোগ দেয়।
চাকরি পাওয়ার পর তার আবার তার NID Card সংশোধন করা হলে দেখা যায়, আবেদনকারীর পিতা/মাতার বয়সের সাথে তার নিজের বয়সের গরমিল হয়। ছোট ভাই বোনের বয়সের সাথেও অসংগতি দেখা যায়।
বিশেষত চতুর্থ শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও জন্ম তারিখ গোপন করে চাকরিতে যোগদানের ফলে যোগ্য ব্যক্তি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়।
বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে ৩টি সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো:
- জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য আমলে নিয়ে চাকরিতে নিয়োগ ও অন্যান্য সেবা প্রদান বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ইতঃপূর্বে জারিকৃত পত্রের ধারাবাহিকতায় সকল বিভাগকে পুনরায় নির্দেশনা প্রদানের জন্য চিঠি মাধ্যমে অনুরোধ জানানো হবে।
- সরকারি কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের ভিত্তি হিসাবে জন্ম সনদ অথবা এস.এস.সি সনদের পাশাপাশি অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পত্র মারফত অনুরোধ জানানো হবে;
- তথ্য গোপন করে চাকরি প্রাপ্তির পর জাতীয় পরিচয়পত্রের বিভিন্ন তথ্য সংশোধনের বিদ্যমান আবেদনগুলো নিস্পত্তির ক্ষেত্রে এনআইডি উইং হতে চিঠি প্রেরণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার মতামত গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, এতদিন চাকরি নেওয়ার পর জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য মিল না থাকলে সার্ভিক বুক এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধন করে দেওয়া হতো। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের ফলে যারা তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়েছেন, তারা ফেঁসে যেতে পারেন।
আমার আইডি কার্ডে বাবা নাম ভুল আর আমার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করতে চাই আমাকে কেউ পরামর্শ দিবেন